পানির সঙ্গে বন্ধুতা

ষষ্ঠ শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বিজ্ঞান - বিজ্ঞান অনুশীলন বই | | NCTB BOOK
5
5

সেশন শুরুর আগে...


  • তোমরা কি এমন একটা জিনিসের নাম বলতে পারো যা ছাড়া আমরা একেবারে অচল? মিনিটখানেক চিন্তা করে এমন জিনিসের তালিকা করলে একটা নাম বোধ হয় সবার তালিকাতেই আসবে- তা হলো পানি! সকল মানুষ না, শুধু মানুষ বলে ভুল হবে, সত্যি বলতে সকল প্রাণীই পানি ছাড়া অচল!
  • জীবনধারণের জন্য ভীষণ প্রয়োজনীয় উপাদান এই যে পানি, এর উৎস কোথায়? তোমাদের বাসাবাড়িতে বা অন্যত্র যে পানি ব্যবহার করা হয় তা কোথা থেকে পাওয়া যায়? এই পানি কোন কোন কাজে লাগে?
  • বাসার সবার সঙ্গে কথা বলে নিচের ছকটা পূরণ করে নাও-

ছক-১ 

ক্রম

উসের নাম

মাটির নিচের (ভূগর্ভস্থ) মাটির উপরের (ভূপৃষ্ঠস্থ) উৎস

প্রাকৃতিক নাকি মানব সৃষ্ট উৎস?

   
   
   
   
   
  • এবার ছক-১ এ তুমি যেসব পানির উৎস উল্লেখ করেছ সেখানের পানি কোন ধরনের কাজে বা প্রয়োজনে ব্যবহার করা হয় তা ভেবে ছক ২ এ লিখে ফেলো। একই সঙ্গে এই উৎসগুলো থেকে প্রাপ্ত পানি পান করার জন্য নিরাপদ কি না তা-ও ছক-২ এর তৃতীয় কলামে টিক চিহ্নের মাধ্যমে আলাদা করো।

ছক-২ 

ক্রম 

পানির উৎস

কোন কোন কাজে ব্যবহৃত হয়?

পান করার জন্য নিরাপদ কিনা

    
    
    
    
    
  • এই যে হরেক রকম পানির উৎসের কথা বললে, এসব উৎস থেকে আনা পানি কি বিশুদ্ধ না করে সরাসরি ব্যবহার করো? বাসার অন্যদের সঙ্গে কথা বলেও এসব তথ্য সংগ্রহ করতে পারো। যা যা জানলে তার ভিত্তিতে নিচের ছকে তথ্যগুলো টুকে রাখো।

উৎসের নাম

যে উৎসের পানি যে কাজে ব্যবহার করা হয়

যে উপায়ে পানি বিশুদ্ধ করা

যেভাবে পানি সংরক্ষণ করা হয় 

   
   
   
   
   

 

প্রথম সেশন


  • তোমার ক্লাসের সবাই তো আগের তথ্যগুলো নিয়ে এসেছে। এবার সবাই মিলে একটু আলোচনা করে দেখো তো, আমরা নিত্যদিনের কাজে ভূ-গর্ভস্থ পানি কী পরিমাণ ব্যবহার করি, আর অন্যদিকে ভূ-পৃষ্ঠের বিভিন্ন জলাশয়ের পানি কতটা ব্যবহার করি।
  • ভূ-গর্ভের পানি কি অসীম? আর ভূ-পৃষ্ঠের? তোমাদের বিজ্ঞান বই থেকে পানিচক্র এবং পানি দূষণ সম্পর্কে পড়ে বন্ধুরা আলাপ করে নাও। এবার আবার নিজেদের তথ্যগুলোর দিকে চোখ ফিরিয়ে দেখো তো।
  • একটু ভেবে বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও-

ভূ-গর্ভস্থ আর ভূ-পৃষ্ঠস্থ পানির উৎসের মধ্যে কোন ধরনের উৎসের পানি বেশি পাওয়া যায়?

----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

কোন ধরনের চিৎসের পানি খাওয়ার জন্য নিরাপদ?

----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

  • উপরের প্রশ্নগুলোর উত্তরে ক্লাসের বাকিরা কী লিখেছে? শিক্ষকসহ বাকিদের সঙ্গে আলোচনা করে দেখো।
  • এখন একটু চিন্তা করে দেখো তো, আমাদের দৈনন্দিন বেশিরভাগ কাজেই কিন্তু আমরা ভূ-গর্ভস্থ অর্থাৎ মাটির নিচ থেকে তোলা পানি ব্যবহার করি। কিন্তু খেয়াল করলেই বুঝবে, যে, মাটির নিচের পানি কিন্তু অতটা সুলভ নয়। পানিচক্র নিয়ে পড়তে গিয়ে তোমরা তো দেখেছ, বৃষ্টির মাধ্যমে বা যেকোনো উপায়ে বায়ুমণ্ডল থেকে পানি আবার মাটিতে ফিরে আসে। সেই পানি কিন্তু প্রাথমিকভাবে জমা হয় নদী নালাসহ বিভিন্ন জলাধার অর্থাৎ ভূ-পৃষ্ঠের বিভিন্ন উৎসে। বাংলাদেশের মতো দেশে তো যে এলাকাতেই থাকো, নদী-নালা-পুকুর-খাল-বিল-হাওড় থেকে শুরু করে জলাশয়ের অভাব নেই। ভূপৃষ্ঠের পানিতে বিভিন্ন জীবাণু বাস করার সম্ভাবনা থাকে বলে পান করার জন্য বা খাবারে ব্যবহারের জন্য মাটির নিচের পানি ব্যবহার করাই যুক্তিযুক্ত। কিন্তু ঘর মোছা, বাগানে পানি দেওয়া, এধরনের কাজগুলো অনায়াসেই এসব জলাধারের পানি দিয়ে করা সম্ভব। তবে এসব জলাধারের পানিতে যেহেতু রাজ্যের বস্তু মিশে থাকে, ব্যবহারের আগে তো পরিষ্কার করে নিতে হবে, তাই না?
  • আচ্ছা, তোমরা কি এমন কিছু তৈরি করতে পারো যাতে ভূ-পৃষ্ঠের এই বিপুল পরিমাণ উৎস থেকে পানি নিয়ে আমরা প্রতিদিনের ব্যবহারে কাজে লাগাতে পারি? সেজন্য পানি বিশুদ্ধকরণের একটা মডেল তৈরি করতে হবে, পাশাপাশি বৃষ্টির পানি ধরে রাখার একটা ব্যবস্থাও তোমরা ভাবতে পারো।
  • তোমার এলাকার যেকোনো একটা জলাশয় বেছে নাও যেখানের পানি অপেক্ষাকৃত পরিষ্কার। এখন ভেবে দেখো, এখানকার পানি কীভাবে বিশুদ্ধ করে ব্যবহারযোগ্য করা সম্ভব? কোন কোন কাজে এই পরিষ্কার পানি ব্যবহার করা যাবে?

 

দ্বিতীয় সেশন


  • যে জলাশয় বেছে নিয়েছ, সেখান থেকে আধা লিটার পানি জোগাড় করতে পারবে? তাহলে এই সেশনে আসার আগে তা নিয়ে এসো। চাইলে শিক্ষকের পরামর্শ বা সহায়তাও নিতে পারো।
  • জলাশয় এবং সংগৃহীত পানি পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে ছক-৪ পূরণ করো।
  • ছক ৪ এর ভিত্তিতে নিজেরা আলাপ করে দেখো তো এই জলাশয়ের পানি দূষণের মূল কারণগুলো কী কী? এই দূষণের ফলে পানিতে কী ধরনের বস্তু /আবর্জনা এসে মেশে?

ছক-৫ 

পানি দূষণের কারণ

আবর্ধজনার ধরণ  

  
  
  

তৃতীয় সেশন


  • পানিতে নানা জিনিসের মিশ্রণ থাকে, অনেক সময় সেগুলো আলাদা করা সহজ, কোনো কোনো সময়ে অনেক কষ্টকর। পানি থেকে অনাকাঙ্খিত বস্তুসমূহ আলাদা করে বিশুদ্ধ করতে হলে আগে মিশ্রণ, দ্রবণ এই বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া দরকার।
  • শুরুতেই মিশ্রণের বিষয়টি নিয়ে আরেকটু ঘাঁটাঘাঁটি করা যাক! আপাতত লাগবে পানি, চিনি, ও লবন । 
  • একটা গ্লাস, লবণ, চামচ, এবং এক চামচ পাঁচ ফোড়ন নাও।
  • গ্লাসে পানি নিয়ে ১ চামচ লবণ ভালো করে চামচ দিয়ে নেড়ে এটি পর্যবেক্ষণ করো। দেখো তো দ্রবণে লবণের দানা দেখা যাচ্ছে কি না? আর প্রত্যেক দলের পাঁচ ফোড়নের সব মশলার উপাদানগুলো সমান কি না।
  • এবার অনুসন্ধানী পাঠ বই থেকে প্রবণ, মিশ্রণ, সমসত্ত্ব অসমসত্ত্ব মিশ্রণ অংশটুকু ভালো করে পড়ে নাও। সমসত্ত্ব ও অসমসত্ত্ব মিশ্রণের আর কোন উদাহরণ কি মনে করতে পারো? একটু ভেবে বা বন্ধুদের সাথে আলাপ করে এই দুই ধরণের মিশ্রণের যা যা উদাহরণ মাথায় আসে, নিচের ছকে লিখে রাখো।

ছক-৬ 

সমসত্ব

অসমসত্ব 

উদাহরণ 

 

 

 

উদাহরণ 

 

 

 

  • অনুসন্ধানী পাঠ বই থেকে ভ্ররণ, দ্রাবক ও দ্রব অংশটুকু মনোযোগ দিয়ে পড়ে নাও। চিনি আর পানির দ্রবণে দ্রাবক, দ্রব আর দ্রবণ কোনটি তা কি সনাক্ত করতে পারছ? তোমার ধারণা অনুযায়ী নিচের শূন্যস্থান পূরণ করো।
  • বলতো স্যালাইন ও খিচুড়ি কোনটা কী ধরনের মিশ্রণ? স্যালাইনের ক্ষেত্রে দ্রাবক ও দ্রব কোনটি?
  • দ্রাবক ও দ্রর কী তা তোমরা এখন নিশ্চয়ই জেনে গেছ। দ্রাবক ও দ্রবের পরিমাণের ভিত্তিতে দ্রবণের ঘনমাত্রা নির্ভর করে। সহজ কথায় বলতে গেলে তুমি নিশ্চয় জানো দুটি একই আকারের গ্লাসে সমান পরিমাণ পানি নিয়ে একটিতে ১ চামচ অন্যটিতে ৩ চামচ চিনি মিশালে কোনটি বেশি মিষ্টি হবে। নিশ্চয়ই যে গ্লাসে তিন চামচ চিনি দেওয়া হয়েছে সেটি। এ বিষয়ে আরও পরিষ্কার ধারণা নেওয়ার জন্য অনুসন্ধানী পাঠ বইয়ের বিভিন্ন ঘনমাত্রার প্রবণ অংশটি পড়ে নাও।
  • 'চলো নৌকা বানাই' অভিজ্ঞতায় তোমরা ঘনত্বের সঙ্গে ভাষা ডোবার বিষয়টি জেনেছ। চলো একটা মজার পরীক্ষণ করে আরও একটু ধারণা পরিষ্কার করা যাক।
  • দুইটা সমান আকৃতির কাচের গ্লাসে একই পরিমাণ পানি নিয়ে একটিতে ১ চামচ লবণ দিয়ে ভালো করে নেড়ে লবণকে দ্রবীভূত করো।
  • অন্য গ্লাসটিতে ১, ২, ৩... করে অনেক চামচ লবণ দিয়ে নাড়ো, যতক্ষণ পর্যন্ত লবণ পানিতে দ্রবীভূত করা যায়। এভাবে লবণ দিতে দিতে একসময় লবণ আর পানিতে দ্রবীভূত না হয়ে গ্লাসের নিচে লবণের তলানি পড়বে।
  • এবার মুরগির দুটি কাঁচা ডিম দুটি গ্লাসের মধ্যে ছেড়ে দিয়ে দেখো তো, কোনটিতে ভাসে আর কোনটিতে ডুবে যায়?
  • যে গ্লাসে ডিমটি ভাসছে কেন ভাসছে? আর যে গ্লাসে ডিমটি ডুবে গেছে কেন ডুবলো সেটির কারণ তোমার নিজের ভাষায় লিখে ফেলো নিচের অংশে।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

  • তুমি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছ, বেশি লবণ দেওয়া গ্লাসটি গাঢ় এবং কম লবণ দেওয়া গ্লাসটির দ্রবণ লঘু। আচ্ছা, আর অন্য কোনোভাবে কী তুমি দ্রবণকে গাঢ় ও লঘু করতে পারবে? কিংবা দেখে। বলতে পারবে কোন দ্রবণ গাঢ় অথবা লঘু? ঝটপট তোমার ভাবনা নিচে লিখে ফেলো।

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

  • দ্বিতীয় গ্লাসের পানিতে লবণ গুলানোর সময় তুমি লক্ষ করে থাকবে, প্রথম চামচ লবণ সহজেই পানিতে মিশে গিয়েছিল। কিন্তু এরপর থেকে নেড়ে নেড়ে গুলাতে বা দ্রবীভূত করতে হয়েছে। একপর্যায়ে যখন লবণ আর পানিতে মিশলোই না তখন গ্লাসের নিচে তলানি হিসেবে জমে রইল। তোমার নিশ্চয়ই এর কারণ জানতে ইচ্ছা করছে- কেন অতিরিক্ত লবণ আর পানিতে দ্রবীভূত হচ্ছিল না। কারণটা জানতে অনুসন্ধানী পাঠ বইয়ের সম্পৃক্ত ও অসম্পৃক্ত দ্রবণ অংশটুকু ভালো করে পড়ে ফেলো।

 

বাড়ির কাজ


  • শ্রেণিকক্ষের মতো করে একটি ছোট গ্লাসে অথবা কাপে করে লবণ-পানির সম্পৃক্ত দ্রবণ বাড়িতেও তৈরি করে নাও। তারপর দ্রবণটিকে একটি হাঁড়িতে ঢেলে নিয়ে চুলায় তাপ প্রয়োগ করে নাড়তে থাকো। দেখো তো কি হয়? লবণ কি দ্রবীভূত হয়েছে নাকি আগের মতো তলানিতে রয়ে গেছে?
  • হাঁড়ি থেকে দ্রবণটি আবার গ্লাসে ঢেলে নাও। এবার চিত্রে দেখানো উপায়ে কলমে অথবা পেন্সিলে সুতা বেঁধে সেটিকে গ্লাসের ওপর আড়াআড়ি রেখে সুতার আরেকপ্রাপ্ত গ্লাসে সাবধানে ডুবিয়ে দিয়ে খুব ধীরে ধীরে ঠান্ডা হওয়ার জন্য রেখে দাও। কয়েকদিন পর কলম বা পেন্সিলসহ সুতাটি উঠিয়ে পর্যবেক্ষণ করো।
  • পর্যবেক্ষণ শেষে দ্রবণ হতে কেলাস প্রস্তুত অংশটুকু পড়ে নাও এবং পরীক্ষণের আলোকে তোমার বিজ্ঞান খাতায় লবণের কেলাসের ছবি আঁকো।

 

চতুর্থ সেশন


  • কখনো কি ভেবেছ, পানিতে কোন কোন বস্তু গলে মিশে যায় আর কোন কোন বস্তু মেশে যায় না? অর্থাৎ পানি কী কী বস্তুকে দ্রবীভূত করতে পারে। চলো একটা পরীক্ষা করে দেখা যাক।
  • শিক্ষকের তত্ত্বাবধায়নে তোমরা দলে ভাগ হয়ে নাও। প্রতিটি দলের কাছে কয়েকটি টেস্টটিউবে অথবা গ্লাসে/কাপে লেবুর রস, কপার সালফেট, স্পিরিট, গ্লুকোজ, দুধ, পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট, আটা, চকের গুঁড়া, হ্যান্ডস্যানিটাইজার ইত্যাদি নিয়ে তাতে পানি যোগ করে ভালো করে নাড়িয়ে পর্যবেক্ষণ করো।
  • কোন কোন উপাদান পানিতে দ্রবীভূত হচ্ছে আর কোনগুলো হচ্ছে না তা ছক-৭ এ লেখ।

ছক-৭ 

দ্রব 

পানিতে দ্রবীভূত হয় (√) 

দ্রবীভূত হয় না (×)

  
  
  
  
  
  
  • অনুসন্ধানী পাঠ বইয়ের সার্বজনীন দ্রাবক অংশটুকু পড়ে নিয়ে বলো তো, গৃহস্থালির বিভিন্ন বস্তুর মধ্যে আর কী কী দ্রবীভূত করতে পানি ব্যবহার করা হয়?
  • চকের গুঁড়া ও পানির মিশ্রণ ঝাঁকালে দুধের মতো দেখায়, তাই না? কিছুক্ষণ রেখে দিলে নিশ্চয়ই তুমি লক্ষ করে থাকবে পাত্রের উপরে কিছুটা ঘোলাটে পানি এবং নিচের দিকে চকের গুঁড়াগুলো তলানি পড়ে আছে। তোমরা এলাকার জলাশয় পর্যবেক্ষণের সময় যে পানি সংগ্রহ করেছিলে সেটি যদি কাদা-পানি মিশ্রিত থাকে তাহলে সেখানেও কি একই ব্যাপার ঘটেছে?
  • এ ধরনের মিশ্রণ সম্পর্কে আরও জানতে অনুসন্ধানী পাঠ বইয়ের সাসপেনশন অংশটুকু পড়ো।
  • এবার বলো তো, কেন সসের বোতল বা ওষুধের বোতলের গায়ে লেখা থাকে ব্যবহারের পূর্বে ঝাঁকিয়ে নিন'। তোমার উত্তর পরের পৃষ্ঠার ফাঁকা জায়গায় লিখে রাখো—

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

  • সাসপেনশনের বেলায় তুমি লক্ষ করেছ, দ্রবের কণাগুলো কিছুক্ষণ স্থির রাখলে সেগুলো পাত্রের তলায় জমা হয়। তুমি হয়তো এটাও লক্ষ করেছ যে, কণাগুলো যদি খুব সূক্ষ্ম হয় তাহলে সেগুলো নিচে থিতিয়ে পড়তে বেশ সময় নেয়। তাহলে স্বাভাবিকভাবেই তোমার মনে নিশ্চয়ই প্রশ্ন জেগেছে, কণাগুলো কি এমন সূক্ষ্ম হতে পারে যেগুলো ঠিক দ্রবীভূতও হবে না, আবার স্থির অবস্থায় রেখে। দিলেও সাসপেনশনের মতো কখনো তলানি হিসেবে জমা হবে না।
  • উত্তর জানতে আরেকটা পরীক্ষা করে দেখা যাক। একটি কাচের গ্লাসে চিনি-পানির দ্রবণ এবং অন্য একটি কাচের গ্লাসে শুধু দুধ নাও। এবার দুটি গ্লাসের মধ্যে টর্চ দিয়ে আলো চালনা করে দেখো তো কোনো বিশেষ কিছু লক্ষ করছ কি না।
  • আলোক রশ্মি দুধের সূক্ষ্ম কণাগুলো থেকে বিচ্ছুরিত হচ্ছে বলে দুধের ভেতর সেটা দেখা যাবে, কিন্তু প্রবণে সেটা হবে না। অদ্ভুত না? তাহলে দুধকে কী ধরনের মিশ্রণ বলবে? সাসপেনশনের মতো তলানিও নেই, আবার সাধারণ দ্রবণের সঙ্গেও তা মিলছে না!
  • বন্ধুরা আলোচনা করে অনুসন্ধানী পাঠ বইয়ের কলয়েড অংশ পড়ে নাও। কলয়েডের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে কি মিল খুঁজে পাচ্ছ?
  • দ্রবণীয়তা সম্পর্কে তো অনেক কিছু জেনেছ। তোমাদের কি মনে কৌতূহল জন্মেছে যে পানি ছাড়া অন্য আর কিছু দিয়েও ভ্রবণ হতে পারে কিনা? সত্যি কথা বলতে কী, এমন অনেক দ্রবণ তুমি নিজেই দেখেছ, যেগুলো পানিতে দ্রবীভূত নয়। একটু চিন্তা করে দেখো!
  • আবার বিজ্ঞান বইয়ের পানিবিহীন দ্রবণ অংশটি পড়ে নাও, বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনায় যোগ দাও।
  • দ্রবণে দ্রব হিসেবে তরল, কঠিন এমনকি গ্যাসও ব্যবহার করা হয়। কোন ধরনের উপাদান মিলে দ্রবণ তৈরি হচ্ছে তার ভিত্তিতে তরল তরল দ্রবণ, তরল কঠিন দ্রবণ, তরল-গ্যাস প্রবণ হতে পারে। এমনকি কঠিন-কঠিন পদার্থেরও দ্রবণ হতে পারে। তুমি কি এরকম বিভিন্ন রকমের দ্রবণের উদাহরণ দিতে পারবে? অনুসন্ধানী পাঠ বইয়ের বিভিন্ন রকমের দ্রবণ অংশটুকু পড়ে তোমার ভাবনার সঙ্গে মিলিয়ে নাও।

 

পঞ্চম সেশন


  • মিশ্রণ আর দ্রবণ নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করছ তো পানি বিশুদ্ধকরণের মডেল বানাতে। তাহলে বিভিন্ন ধরনের মিশ্রণ বুঝলেই শুধু চলবে না, বরং মিশ্রণ থেকে বিভিন্ন বস্তু কীভাবে আলাদা করতে হয়। তাও জানতে হবে।
  • পানি নিয়েই যেহেতু আমাদের কাজ, পানির প্রবণ নিয়েই কাজ করা যাক। পানিতে তো কত রকম বস্তু মিশে থাকে। পরীক্ষার জন্য আগে পানিতে লবণ, বালি ইত্যাদিসহ তোমাদের ইচ্ছেমতো কিছু কঠিন পদার্থ মিশিয়ে নাও। এখন সেগুলো আবার আলাদা করার পালা।
  • তোমাদের দলের পাত্রটি কিছুক্ষণের জন্য রেখে দাও দেখবে পাত্রের তলায় তলানি জমেছে। উপরের অংশের পানি আগের চেয়ে পরিষ্কার হয়ে গেছে। একে বলে থিতানো। তারপর উপরের পরিষ্কার পানি খুব সাবধানে অপর একটি পাত্রে কাচ অথবা অন্য কোনো দণ্ডের পা বেয়ে ঢেলে নাও যেন তলায় জমে থাকা বালির অংশ বা তলানি নড়ে ওলটপালট না হয়ে যায়। যখন উপরের সমস্ত পানি পড়ে যাবে, তখন পাত্রের তলায় শুধু বালি থেকে যাবে। এই পদ্ধতিকে বলে ডিক্যান্টেশন। অনুসন্ধানী পাঠ বই থেকে ডিক্যান্টেশন অংশ পড়ে ধারণা আরও পরিষ্কার করে নাও।
  •  তারপর একটা ফানেলে ফিল্টার পেপার ভাঁজ করে বসিয়ে সেটিকে বিকারের উপরে বসাও। নমুনা পানিগুলো আস্তে আস্তে ফানেলের মধ্যে ফিল্টার পেপারের উপর ঢালো।
  • যদি তোমার কাছে ফিল্টার পেপার না থেকে থাকে তাহলে পাতলা সুতি কাপড় ব্যবহার করতে পারো। আর ফানেলের পরিবর্তে প্লাস্টিকের বোতল কেটে ব্যবহার করতে পারো।
  • দেখবে পানিতে ভাসমান অপদ্রব্যগুলো ফিল্টার পেপার অথবা সুতি কাপড়ের ভেতর দিয়ে যেতে পারছে না, তাই পানির মধ্যে মিশ্রিত অপদ্রব্যগুলো আলাদা করা যাচ্ছে। এই পদ্ধতিকে বলে ছাঁকন।
  • দ্রবণের ভেতর থেকে অদ্রবণীয় কঠিন পদার্থের কণাগুলোকে আলাদা করার জন্য সবচেয়ে পরিচিত পদ্ধতি হচ্ছে ছাঁকন। আমরা সবাই ছাঁকন পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত, চা থেকে চা পাতা আলাদা করার জন্য আমরা ছাঁকনি ব্যবহার করে থাকি।
  • শিক্ষকের দেওয়া মিশ্রণের তিনটি উপাদানের দুটি আলাদা করা গেল। এখন তোমার কাছে স্বচ্ছ কিন্তু লবণাক্ত পানি আছে। এর আগে কেলাসন প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত লবণ পানির প্রবণ থেকে বিশুদ্ধ লবণ আলাদা করেছ। কঠিন পদার্থের বিশুদ্ধকরণের একটি পদ্ধতি হলো কেলাসন।
  • এবার বাষ্পীভবন ও পাতন প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত দ্রবণ থেকে লবণ ও পানি আলাদা করতে শিখবে।
  • লবণ-পানির দ্রবণটি একটি বিকারে ঢেলে নিয়ে সেটিকে তারজালির উপর রেখে নিচ থেকে স্পিরিট ল্যাম্পের সাহায্যে তাপ দিতে থাকো। (সময় বাঁচাতে ৫০মিলি, দ্রবণ নাও) / বিকারে তাপ দেওয়ার সময় বিকারের ওপরে একটি স্টিলের ঢাকনা অথবা ওয়াচ গ্লাস রাখো।
  • দেখবে বাষ্পীভূত পানির কণাগুলো ঠান্ডা হয়ে ঢাকনায় বা ওয়াচ গ্লাসে জমা হচ্ছে। এই বিন্দু বিন্দু পানি বিশুদ্ধ পাতিত পানি।
  • এভাবে তাপ দিতে থাকো, যতক্ষণ পর্যন্ত বিকারের পানি শুকিয়ে না যায়। তাপ দিয়ে পাত্রের সব পানি বাষ্পীভূত করে ফেললে একসময় পাত্রের তলায় শুধু লবণ থাকবে। বাষ্পীভবন প্রক্রিয়ায় এভাবে একটি দ্রবকে আলাদা করা যায়।
  • মিশ্রণ থেকে কীভাবে নানা ধরনের বস্তু আলাদা করা যায় তা তো শিখেই গেলে। এখন এই কৌশলগুলো কাজে লাগিয়ে আবার তোমার নিজের প্রজেক্ট কেমন হবে তা নিয়ে ভাবা যাক!
  • ভূ-পৃষ্ঠের কোন উৎসের পানি বিশুদ্ধ করে নিরাপদে ব্যবহার করা সম্ভব (পান করা বা রান্না-খাওয়ার কাজ বাদে) তা আবার চিন্তা করে দেখো। তোমার এলাকার কোনো একটা জলাশয় বেছে নাও। এবার এই জলাশয়ের পানিতে কী ধরনের বস্তু মিশে থাকে, পানি বিশুদ্ধ করতে হলে সেগুলো কীভাবে আলাদা করবে তা ঠিক করো।
  • পরের পৃষ্ঠার ফাঁকা জায়গায় তোমার পরিকল্পনা লিখে বা এঁকে রাখো, চাইলে বন্ধুদের সঙ্গে আলাপ করে নিতে পারো।

 

 

 

 

 

 

ষষ্ঠ সেশন


  • তোমার পরিকল্পনা বন্ধুদের দেখাও। অন্যদের পরিকল্পনায় এমন কিছু কি পেয়েছ যা তোমার মাথাতেই আসেনি?
  • এবার একটা মজার কাজ করা যাক। তোমার নিজের পরিকল্পনা কাজে লাগিয়ে বাসায় তুমি তো মডেল তৈরি করতে পারবে, পানি বিশুদ্ধ করতেও পারবে। তবে তার আগে পানি বিশুদ্ধ করার খুব সহজ এবং পরিচিত একটা মডেল সবাই মিলে বানিয়ে দেখা যাক।
  • হাতের কাছে পাওয়া যায় এমন সব উপকরণ ব্যবহার করেই পানি বিশুদ্ধকরণের এই মডেলটা বানানো সম্ভব। এর জন্য তোমার যা যা লাগবে- একটি দুই বা আড়াই লিটারের প্লাস্টিকের খালি বোতল, ছুরি, বিকার, তুলা অথবা সুতি কাপড়, কয়লা, মোটা ও চিকন দানার বালি, কিছু নুড়ি-পাথর এবং কাদা-বালি মিশ্রিত দুষিত পানি।
  • প্রথমে একটি বোতলের তলার অংশ ছুরি দিয়ে কেটে সমান করে নাও। এরপর বোতলটির মুখ বা সিপি খুলে ফেলে দিয়ে সে অংশে ছবিতে যেভাবে দেখানো হয়েছে, সেভাবে তুলা অথবা সুতি কাপড় গুঁজে দাও অথবা বেঁধে দাও।
  • এবার বোতলের তলার অংশটিকে খাঁড়া করে ধরে প্রথমে কয়লার টুকরা, তার উপর মোটা দানার বালি, তার উপর চিকন দানার বালি এবং তার উপর কিছু নুড়ি-পাথরের স্তর করে দাও।
  •  আবার বোতলটিকে বিকারের উপর বসিয়ে তাতে আস্তে আস্তে দূষিত পানি ঢালো।
  • কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর দেখবে বিকারে তুলনামূলক স্বচ্ছ পানি জমছে। যদিও এই পানি এখনো পানযোগ্য নয়, তবে তুমি কিন্তু বিশুদ্ধ পানির একটি মডেল বানিয়ে ফেলেছ। এজন্য তোমাকে অভিনন্দন।
  •  বিকারের পানি ভালোভাবে ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে পান উপযোগী নিরাপদ পানি সংরক্ষণ করো। (এছাড়া পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট অথবা ফিটকারি মিশিয়েও পানি বিশুদ্ধ করতে পারো।) 
  • এই যে তোমরা খাওয়া দাওয়া ছাড়া অন্যান্য ব্যবহারের জন্য পানি বিশুদ্ধকরণের একটা মডেল বানিয়ে ফেললে, এটা তো অন্যদেরও জানানো উচিৎ, তাই না? আবার ভূ-গর্ভের পানি যে সীমিত, এবং আমরা যে দ্রুতই এই পানির স্তরের ক্ষতি করে ফেলছি সেটাও অন্যদের জানা উচিত। এসকল কিছু নিয়ে এক বা একাধিক তথ্যচার্ট বানিয়ে স্কুলে সবাই দেখতে পায় এমন জায়গায় প্রদর্শন করতে পারো। কিংবা তোমরা চাইলে অন্য কোনো বুদ্ধিও বের করতে পারো, ভেবে দেখো কী করতে চাও। তোমার দলের তথ্যচার্টের আইডিয়া এঁকে বা লিখে রাখো-

 

Content added By
Promotion